আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছে। অবশ্য এই আত্মীয়তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মাতা ও পিতার দিক থেকে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা। মা ও বাবার দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার অর্থ হলো, প্রয়োজনের সময় সামর্থ্যানুযায়ী টাকা-পয়সা দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা ও সুপরামর্শ দেওয়া। ফরজ ও মুস্তাহাব হকসমূহ আদায় করা। সুখ-দুঃখে খোঁজ-খবর নেওয়া এবং বিপদাপদ ও বালা-মুসিবতে পাশে দাঁড়ানো। সালাম বিনিময় করা।ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করা। ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া ও ক্ষমা করা। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়গণ হলেন, মা, নানী, নানীর মা, দাদী, দাদীর মা, দাদা, দাদার পিতা, নানা, নানার পিতা, ছেলে, মেয়ে, তাদের সন্তান-সন্ততি, ভাই, বোন, তাদের সন্তান-সন্তুতি, চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও তাদের সন্তান-সন্ততিগণ। এসব লোকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি কুরআন হাদিসে জোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন সদাচরণ পাওয়ার অধিক হকদার মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘বস্তুতঃ যারা আত্মীয় আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশি হকদার।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৭৫)
সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ : মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশকে মহান আল্লাহ তাকওয়ার সমান্তরালে দাঁড় করিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে সতর্ক থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা করে থাক এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ০১) অন্য আরেকটি আয়াতে স্বজনের অধিকার যথাযথভাবে আদায় করে সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্যে উত্তম যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। তারাই সফলকাম।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৩৮)।
সম্পর্কোন্নয়নে রিজিক বাড়ে : মানুষের দিবা-রাত্রির অধিকাংশ কর্ম-তৎপরতা জীবিকা নির্বাহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। হাড় খাটুনি খাটা ও ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করা মূলত জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যেই সম্পন্ন হয়। প্রতিটি মানুষ রিজিক বৃদ্ধি করতে ও সুনাম অক্ষুণœ রাখতে চায়। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে রিজিক বৃদ্ধি পায় ও সুনাম অক্ষুণœ রাখা যায়। হাদিস শরিফে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাকে রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত আনাস ইবনু মালিক রা. বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)।
শাস্তিযোগ্য অপরাধ : আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য। স্বজন-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদি কেউ রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাহলে মহান আল্লাহ তাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করবেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাকে অভিসম্পাতযোগ্য পাপ বলে আখ্যায়িত করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে ওরা ওই সমস্ত লোক যাদের জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত এবং ওদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৫)। হাদিস শরিফে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাকে ভয়ানক অপরাধ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেসব লোক আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে এর শাস্তির মুখোমুখি হবে। হযরত আবু বাকরা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই। আল্লাহ তাআলা এর সাজা ইহকালেও প্রদান করেন এবং পরকালের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)।
সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা : প্রতিটি মুসলমানের জন্য কর্তব্য হলো, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। কেননা, যেসব লোক রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে মহান আল্লাহও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। পক্ষান্তরে যেসব লোক আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে করুণাময় আল্লাহও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি নিস্ক্রান্ত হলে রক্ত সম্পর্ক দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামো। সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ বললেন, ‘যে তোমাকে সম্পর্কযুক্ত রাখে আমিও তাকে সম্পর্কযুক্ত রাখব; আর যে তোমার হতে থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব। এতে কি তুমি খুশি নও? সে বলল, নিশ্চয়ই হে আমার প্রভু। তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হলো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৩০)
প্রকৃত সম্পর্ক রক্ষাকারী : কিছু আত্মীয় এমন আছে যাদের সঙ্গে সদাচরণ করলেও তারা অসদাচরণ করে। সমাদর করলেও খোশামোদ ভাবে ও পাশ কাটিয়ে চলে। এমনটি করা আদৌ উচিত নয়। স্বজনদের অবজ্ঞাপূর্ণ এমন আচরণের শিকার হওয়ার পরও তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা ও সদ্ভাব বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। কেননা, এমন লোকদেরই কেবল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী বলা হয় যারা স্বজনদের অবহেলার শিকার হওয়া পরও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সমানুরূপ ব্যবহারের মনোভাব নিয়ে সম্পর্ক রক্ষাকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, বরং কেউ কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলেও সে যদি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে তবে সে-ই হচ্ছে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯০৮)।
আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার-পরিজনের অবহেলার শিকার হওয়া সত্ত্বেও যেসব লোক স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টায় থাকে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য এমন একজন সাহায্যকারী ফেরেশতা নিযুক্ত করেন যে তাকে সব সময় সাহায্য করে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার আত্মীয়-স্বজন আছেন। আমি তাদের সাথে সদাচরণ করি; কিন্তু তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি; কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সহনশীলতা প্রদর্শন করে থাকি আর তারা আমার সঙ্গে মূর্খসুলভ আচরণ করে। তখন তিনি বললেন, তুমি যা বললে যদি প্রকৃত অবস্থা তাই হয় তাহলে তুমি যেন তাদের উপর জ্বলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছ। আর সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী ফেরেশ্তা থাকবে, যতক্ষণ তুমি এ অবস্থায় বহাল থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪১৯)।
সম্পর্ক বজায় রাখায় জান্নাত লাভ : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এমন এক ভয়াবহ অপরাধ যে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জান্নাত হতে বঞ্চিত করে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে! হযরত জুবাইর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯০৯)। অন্য একটি হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ পাওয়া ও জান্নাতে যাওয়ার উপায় বলে অভিহিত করা হয়েছে। হযরত আবু আইয়ুব রা. বলেন, এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করলো, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যে আমল আমাকে জান্নাতের কাছে পৌঁছে দেবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কোন কিছু শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। সে ব্যক্তি চলে গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাকে যে আমলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন